ডেঙ্গু প্রতিরোধে কতটা প্রস্তুত কক্সবাজার

এম. বেদারুল আলম :

প্রতিদিনই ক্রমান্বয়ে কক্সবাজারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগির সংখ্যা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজারে গতকাল ৩১ জুলাই পর্যন্ত ১৪জন রোগীর তথ্য দিয়েছে কক্সবাজার সিভিল সার্জন।  তবে সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু সেল বলছে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীরর সংখ্যা ১৭ জন।  এর মধ্যে আগে ১ জন রোগী মারা গেছে। এবং এক রোগির শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় সদর হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়েছে । বর্তমানে ১৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগি সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ডেঙ্গু সেলের প্রধান ডাঃ শামসুদ্দীন।

তিনি আশংকা করছেন ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। ফলে কক্সবাজারে ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগির সংখ্যা দিন দিন আরো বৃদ্ধি হতে পারে। সবচেয়ে আশংকাজনক এবং দূর্ভাগ্য যে কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগি সনাক্তকরণের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেই এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন। ফলে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি রোগির কিভাবে ডেঙ্গু সনাক্ত করা হবে তা জানা যায়নি।

ডেঙ্গুর প্রার্দূভাব বাড়ার কারনে সারা দেশের সাথে উদ্বিগ্ন পুরো কক্সবাজার। এমতাবস্থায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রন বা সনাক্তকরণ নিয়ে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সংশ্লিষ্টরা কতটা প্রস্তুত এমন প্রশ্ন করা হয় জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আবদুল মতিনের কাছে। তিনি প্রস্তুতি সম্পর্কে দৈনিক কক্সবাজারকে জানান-কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগির জন্য হেল্প ডেক্স খোলা হয়েছে, আলাদা করে ডেঙ্গু কর্নার করা হয়েছে যাতে কোন রোগি জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসলে তাকে ভর্তি দিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয়। আমরা যে রোগি পাচ্ছি তা বাইরে থেকে সনাক্ত করা ডেঙ্গু রোগি। তবে কক্সবাজারের প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে এন্টি বডি থাকতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গুরোগির হার উর্ধমূখি, দিন দিন বাড়তে পারে। কক্সবাজারের মানুষ সতেতন না হলে বিপদ হতে পারে। কেননা পৌরসভার নালা নর্দমাতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান জরুরি ভিত্তিতে আরো আগে করা উচিত ছিল।

এদিকে কক্সবাজারের সিনিয়র আইজীবী রমিজ আহমেদ জানান, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গত ৩০ জুলাই দুপুরে জ্বরের চিকিৎসা করাতে গেলে বর্হি বিভাগে টিকেট নিয়ে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়ার পর তিনি কয়েকটি পরীক্ষা করাতে ব্যবস্থাপত্র দেন। এরমধ্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ও ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ করেন। যথারীতি সদর হাসপাতালের ল্যাবে গেলে সেখানে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। প্রাইভেট হাসপাতােেল উক্ত পরীক্ষাটি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয় বলে আইনজীবী জানান।

তিনি বলেন- কক্সবাজার সদর হাসপাতাল হলো গরীব এবং মধ্যবিত্তদের ভরসার ঠিকানা , এখানে এ পরীক্ষা না থাকা মানে গরীবের বিচানায় মরার শামিল। তিনি দ্রত সময়ের মধ্যে সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু সনাক্তকরণের পরীক্ষা ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

এদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু সেলের প্রধান ডাঃ শামসুদ্দীন নানা প্রস্তুতি ও কক্সবাজারের ডেঙ্গু বিষয়ে জানান, সদর হাসপাতালে এ পর্যন্ত ১৭ জন ডেঙ্গু রোগি ভর্তি রয়েছে। ১৭ জনের অবস্থা ভালো তবে একজন রোগির ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ায় একটু অবনতির দিকে রয়েছে। ডেঙ্গুর সনাক্তকরনের টেস্ট বিষয়ে তিনি বলেন, সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু সনাক্তকরনের যে প্রকৃত পরীক্ষা ( ২টির নাম এনএস-১ এবং এন্টিবডি টেস্ট) তা সদর হাসপতালে নেই।

কক্সবাজারে ১৭ জন রোগির মধ্যে ১৩ জন ঢাকা থেকে ডেঙ্গু রোগি হয়ে এসে ভর্তি হয়েছে। বাকি ৪ জনের মধ্যে উখিয়ায় ১ জন, রামুতে ২ জন, টেকনাফে ১ জন  আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানান। সদরের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রন সেলে ৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগিদের দেখভাল করছেন বলে জানান টিমের প্রধান ড্ঃ শামসুদ্দীন।

তিনি ডেঙ্গু রোগি আরো বাড়বে বলে আশংকা করছেন।
এদিকে ডেঙ্গুর বিস্তাররোধে ফুলের টব, পরিবেশের চারপাশে জমে থাকা ময়লা আর্বজনা, যে সব স্থানে মশা জন্মায় সে সব জায়গা, বাড়ির আশপাশ পরিস্কার এবং দিনে রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন চিকিৎসকরা।